Tuesday, March 5, 2019

নানামুখী সঙ্কটে ব্যাংক খাত

প্রবল মূলধন ঘাটতিতে ভুগছে সরকারি ব্যাংক

এই মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক সরকারের কাছে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে। ঘাটতি পূরণের সবচেয়ে বেশি অর্থ চেয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এ জন্য ব্যাংকটির প্রয়োজন ৭ হাজার ৯৩৫ কোটি ৫৬ লাখ। এর পরের অবস্থানে রয়েছে জনতা ব্যাংক। সরকারি ব্যাংকের মধ্যে খেলাপি ঋণের শীর্ষে থাকা এই ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি পূরণে প্রয়োজন ৬ হাজার কোটি টাকা। বেসিক ব্যাংকের দরকার ৪ হাজার কোটি টাকা। আর রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক মূলধন ঘাটতি পূরণে চেয়েছে ৭৭৫ কোটি টাকা। অন্য দিকে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের সরকারি অংশ পূরণেও প্রয়োজন আরো এক কোটি ১২ লাখ টাকা। গেল মাসে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে মূলধন ঘাটতি পূরণে এই অর্থ চাওয়া হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

bangla news

এ দিকে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা কমিয়ে আনার ১৫ মাসের সময়সীমা শেষ হচ্ছে চলতি মাসে।

আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে ব্যাংকগুলোর ঋণ আমানতের অনুপাত ৮৫ শতাংশ থেকে সাড়ে ৮৩ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। কিন্তু এখনো অনেক ব্যাংক নির্ধারিত সীমার চেয়ে অনেক ওপরে রয়েছে। বিশেষ করে কয়েকটি ইসলামী ব্যাংকের এ সীমা ৯৫ শতাংশের ওপরে রয়েছে। বিনিয়োগসীমা সমন্বয়ের সময় ফুরিয়ে আসায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ব্যাংকারেরা। তারা জানিয়েছেন, যারা ঋণ নিয়েছেন তাদের অনেকেই ঋণ পরিশোধ করছেন না। বেড়ে গেছে খেলাপি ঋণ। ফলে আলোচ্য সময়ে ঋণ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়নি বরং সুদ যুক্ত হওয়ায় তা আরো বেড়ে গেছে। বাড়তি ঋণ প্রবাহ সমন্বয় করার একমাত্র উপায় ছিল আমানত প্রবাহ বাড়ানো। কিন্তু গত এক বছরে ব্যাংকিং খাতে আমানত প্রবাহ বাড়েনি বরং কমেছে। এর ফলে অনেকের পক্ষেই বাড়তি বিনিয়োগ সমন্বয় করা সম্ভব হয়নি। এমনি পরিস্থিতিতে আগামী ২৫ দিনে কিভাবে সমন্বয় করা হবে তা নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন।



সরকারি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির ব্যাপারে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাজেটে মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য অর্থ বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ১৫ শ’ কোটি টাকা। কিন্তু ব্যাংকগুলো চেয়েছে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা কখনোই দেয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ইতোমধ্যে সরকারি ব্যাংককে মূলধন ঘাটতি পূরণে কী পরিমাণ অর্থ চলতি অর্থবছরে দেয়া হবে তার একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এই খসড়া অনুযায়ী বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে দেয়ার কথা ৮৪৯ কোটি টাকা। জনতা ১০০ কোটি টাকা, বেসিক ৫০ কোটি টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক পাবে ৫০০ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য মূলত অর্থ ছাড় করে অর্থ বিভাগ। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে কোনো চাহিদাপত্র পায়নি। পেলে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আগামী জুনে মূলধন ঘাটতি পূরণে অর্থ ছাড় শুরু করা হবে। তবে এই অর্থের পরিমাণ কোনোভাবে ১৫ শ’ কোটি টাকার বেশি হবে না।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গত চার অর্থবছরে সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য অর্থ দেয়া হয়েছে ১০ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় খাতের ব্যাংক বেসিককে। এই ব্যাংককে মোট দেয়া হয়েছে ৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। বরাদ্দের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল সোনালী ব্যাংক। এই ব্যাংককে দেয়া হয়েছে ৩ হাজার ০৩ কোটি টাকা। একই ভাবে জনতাকে ৮১৪ কোটি টাকা, অগ্রণীকে এক হাজার ৮১ কোটি টাকা, রূপালীকে ৩১০ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে ৭২৯ কোটি ৮৬ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে।

তবে এবার অস্বাভাবিক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে রাষ্ট্রীয় খাতে দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক জনতা। তাদের মূলধন ঘাটতি ৬ হাজার কোটি টাকা। শুধু এক বছরের ব্যবধানে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে তিন গুণ। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৫ হাজার ৮১৮ কোটি। এক বছরের ব্যবধানে গত বছর (২০১৮) ডিসেম্বরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ১৭ হাজার ৩০৪ কোটি ৭৭ লাখ। ফলে এক বছরেই জনতার খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার ৪৮৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এই ঋণের পুরোটাই আবার দুইটি গ্রুপের কাছে রয়েছে। যাদের দুর্নীতির ও অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এই ঋণ প্রদান করেছে। ফলে ব্যাংকটি গত বছর নিট লোকসান করেছে ৩ হাজার কোটি টাকা।



এ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২০১৭ সালের শেষ দিকে যখন এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তখন ব্যাংকিং খাতে ঋণপ্রবাহ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছিল। তখন বাস্তবে বিনিয়োগ চোখে না পড়লেও বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে এ বিনিয়োগ প্রবাহ। দেখা যায়, ওই বছরের নভেম্বরে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র স্থাপনের হার (এলসি খোলার হার) ৩০ শতাংশ অতিক্রম করে। আর বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ১৬ শতাংশ থেকে বেড়ে প্রায় ২০ শতাংশে উঠে যায়। আগ্রাসী এ ব্যাংকিংয়ের কারণে ঋণ আমানতের অনুপাত কোনো কোনো ব্যাংকের শত ভাগ ছেড়ে যায়। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে ৮৫ ভাগ। ব্যাংকগুলোর এমন আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ের কারণে তহবিল ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। দীর্ঘ দিন যাবৎ আমানতের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ১০ শতাংশের নিচে। সাধারণত ঋণের প্রবৃদ্ধি আমানতের চেয়ে কম হওয়ার কথা, সেখানে আমানতের প্রবৃদ্ধির চেয়ে ঋণের প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণ হয়ে যায়।

তহবিল ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়ার আগেই ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করে। এরই অংশ হিসেবে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি ব্যাংকগুলোর জন্য এ বিষয়ে এক সার্কুলার জারি করা হয়। বলা হয়, ঋণ আমানতের অনুপাত প্রচলিত ব্যাংকগুলোকে ৮৫ শতাংশের পরিবর্তে সাড়ে ৮৩ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য ৯০ শতাংশের পরিবর্তে ৮৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। এর জন্য সময় দেয়া হয় প্রথম ৬ মাস। অর্থাৎ যে সব ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগ থাকবে তাদের গত বছরের ৩০ জুনের মধ্যে পুনর্নির্ধারিত সীমার মধ্যে নামিয়ে আনতে বলা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন নির্দেশনার পর ব্যাংকিং খাতে অনেকটা আতঙ্ক বিরাজ করে। যে সব ব্যাংকের ঋণসীমা নির্ধারিত সীমার চেয়ে অতিরিক্ত ছিল তাদের নতুন বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়। আবার রাতারাতি বাড়তি বিনিয়োগ গ্রাহকের কাছ থেকেও আদায়ও করা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে কোনো কোনো ব্যাংক আমানত বাড়িয়ে ঋণসীমা সমন্বয় করার উদ্যোগ নেয়। এতে আমানতের সুদ হার বেড়ে যায়, তবে এর চেয়ে বেশি হারে ঋণের সুদহার বাড়তে থাকে। ইতোমধ্যে কোনো কোনো ব্যাংকের শিল্প ঋণের সুদহার ১৫ শতাংশ থেকে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত উঠে যায়। যেখানে আগে ছিল সাড়ে ১২ শতাংশ।

ঋণের সুদহার বাড়তে থাকায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ব্যবসায়ী সমাজ। কারণ নানা কারণে বিনিয়োগ ব্যয় বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে ঋণের সুদহার বেড়ে গেলে ব্যবসায় ব্যয় আরো বেড়ে যাবে। বেড়ে যাবে পণ্যের উৎপাদন ব্যয়। ফলে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে ব্যবসায়ীদের পণ্যের মূল্যের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমে যাবে। এমনি অবস্থায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর চাপ দিতে থাকে। এক পর্যায়ে গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি সার্কুলার দিয়ে সময়সীমা ছয় মাস বাড়ানো হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা পরিপালনের সময়সীমা ছয় মাস থেকে বাড়িয়ে ১২ মাস করা হয়।

কিন্তু এতেও ব্যবসায়ীরা সন্তুষ্ট না হয়ে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। ব্যাংকের ব্যবসায়ী পরিচালকেরা হোটেল সোনারগাঁওয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরকে নিয়ে এক বৈঠকের আয়োজন করে। ওই বৈঠকে বাজারে টাকার সঙ্কট কাটাতে আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য নগদ জমার হার (সিআআর) ১ শতাংশ কমিয়ে নেন। এর ফলে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা চলে যায় ব্যাংকগুলোর হাতে। এতেও ক্ষান্ত না হয়ে ঋণ আমানতের অনুপাত বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক তার জারি করা সার্কুলারে তৃতীয় দফায় গত ৯ এপ্রিল পরিবর্তন আনে। ঋণ আমানতের অনুপাত নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নামিয়ে আনতে ৩১ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় দেয়া হয়, যা চলতি মাসে শেষ হচ্ছে।
সাধারণ ব্যাংকারদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া হলে ব্যাংকগুলো তা বিনা বাক্যে বাস্তবায়ন করবে এটাই নিয়ম। কিন্তু ব্যবসায়ীদের চাপে বার বার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করায় তখন প্রশ্নের মুখে পড়ে যায় বাংলাদেশ ব্যাংক।

দেশের প্রথম প্রজন্মের একটি ব্যাংকের এমডি গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা জারি করার গত ১৪ মাসে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ কমেনি, বরং প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বেড়ে গেছে। ব্যাংকগুলো যে ঋণ দিয়েছিল তা আদায় না হওয়ায় পুঞ্জিভূত খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। কিন্তু এ সময়ে আমানত প্রবাহ বাড়েনি বরং কমেছে। আমানত প্রবাহ কমে যাওয়ার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেন ওই এমডি। তিনি জানান, ব্যাংক পরিচালকদের চাপে আমানতের সুদ হার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু সঞ্চয়পত্রের সুদহার রয়েছে সাড়ে ১১ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশ। ফলে ব্যাংকে সুদহার কমে যাওয়ায় সাধারণ আমানতকারীরা ব্যাংকে আমানত রাখতে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন। নতুন করে আমানত তো রাখেনই নাই, বরং বিদ্যমান আমানতও কেউ কেউ তুলে নিয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছেন।

এর বাইরে ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারির ফলে সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতে অনেকটা আস্থার সঙ্কট দেখা দেয়। এর প্রভাবেও আমানত কমে গেছে। কিন্তু ঋণ আদায় কমে যাওয়ায় সুদে আসলে তা খেলাপি ঋণ হয়ে সামগ্রিক ঋণ বেড়ে গেছে। এর ফলে বিনিয়োগসীমা অনেকেই সাড়ে ৮৩ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনতে পারেনি। আবার কয়েকটি ইসলামী ব্যাংক কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দেদার ঋণ বিতরণ করেছে। এমন একটি ইসলামী ব্যাংকের ঋণ আমানতের অনুপাত ৯৫ শতাংশের ওপর উঠে গেছে। এমনি পরিস্থিতিতে আগামী ২৩ দিনের মধ্যে কিভাবে বিনিয়োগসীমা নির্ধারিতসীমার মধ্যে নামিয়ে আনা হবে তা নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

ইতোমধ্যে ব্যাংকিং খাতে টাকার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অনেক ব্যাংক এ সঙ্কট মেটানোর জন্য কলমানি মার্কেট নির্ভর হয়ে পড়েছে। কেউবা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নিচ্ছে। এর ওপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘাঁ হিসেবে দেখা দিয়েছে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের নতুন সার্কুলার। নতুন সার্কুলার অনুযায়ী অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে তার বিপরীতে সিআরআর ও এসএলআর সংরক্ষণ করতে হবে। এতে ব্যাংকিং খাতে টাকার সঙ্কট আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। অপর দিকে চাহিদার চেয়ে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ কমে গেছে। এতে ব্যাংকগুলোতে ডলার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ সঙ্কট মেটাতে স্থানীয় মুদ্রা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার কিনছে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলো। সব মিলিয়ে দেশের ব্যাংকিং খাতে এক ধরনের অস্থিরতা শুরু হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগসীমা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কিভাবে সমন্বয় করা হবে তা নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন।

তবে বাংলাংদেশ ব্যাংকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ১৫ মাস পরে এসে আবার বিনিয়োগসীমা সমন্বয়ের সময় হেরফের করা হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা আরো প্রশ্নের মুখে পড়ে যাবে। ফলে বিনিয়োগসীমা সমন্বয়ের নির্ধারিত সময় কোনোভাবেই পরিবর্তন করা হবে না বলে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

অস্ট্রেলিয়ার প্রথম নারী পাইলটের নামে নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

অস্ট্রেলিয়ার নারী বৈমানিকের অন্যতম নারী অগ্রদূত ন্যান্সি-বার্ড ওয়াল্টনের নাম পেতে যাচ্ছে দেশটির নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সোমবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন ‘ওয়েস্টার্ন সিডনি আন্তর্জাতিক ন্যান্সি-বার্ড ওয়াল্টন বিমানবন্দর’ নামটি ঘোষণা করেন। ২০২৬ সালে সিডনির ব্যাজরিস ক্রিকে চালু হবে নতুন বিমানবন্দরটি।

অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে ব্যস্ততম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সিডনির কিংসফোর্ড স্মিথ বিমানবন্দরের চাপ কমাতে গত বছর নির্মাণকাজ শুরু হয় সিডনির দ্বিতীয় এই বিমানবন্দরটির। অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে নারীদের মধ্যে অন্যতম ন্যান্সি-বার্ড ওয়াল্টনের সম্মানে এ নাম রাখা হয়। অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাস তাঁকে ‘প্রথম নারী বৈমানিক’ হিসেবে সম্বোধন করে থাকে।

বিমানবন্দরের নাম ঘোষণার সময় স্কট মরিসন বলেন, ‘নারীদের সমাজের কল্যাণে এগিয়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে উৎসাহিত করতে বিমানবন্দরটি তাঁর নামে রাখা হচ্ছে। আর অস্ট্রেলিয়ার আকাশের এই হিরো সেটা জেনে হয়তো গর্বিত হতেন।’ নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গ্ল্যাডিস বেরেজিক্লিয়ান মরিসনের এই অনুপ্রাণিত নামকরণকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ‘ন্যান্সি শুধু নারীদের জন্য নয়, বরং ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবা এবং মানুষকে সাহায্য করার মানসিকতা রাখা প্রত্যেকের জন্যই তিনি একজন দৃষ্টান্ত।’

ন্যান্সি-বার্ড ওয়াল্টন ১৯১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে কমবয়সী প্রথম নারী বৈমানিক হিসেবে লাইসেন্স পান তিনি। এ ছাড়া দেশটির যাত্রীবাহী বিমান চালানোর বাণিজ্যিক লাইসেন্স ব্যবহারেও প্রথম নারী তিনি।

অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত বৈমানিক কিংসফোর্ড স্মিথের কাছ থেকে বিমান চালনা শেখেন ন্যান্সি। ১৯৫৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত বিমান প্রতিযোগিতায় মার্কিন নাগরিকদের বাইরে প্রথম নারী হিসেবে পুরস্কার জেতেন। ১৯৫৩ সালে দেশটির প্রথম নারী বৈমানিক সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এটির সভাপতি পদে ছিলেন ন্যান্সি। ১৯৬৬ সালে জনসেবায় তাঁর বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে যুক্তরাজ্যের অন্যতম রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তবে ন্যান্সি লাইসেন্স পাওয়া অস্ট্রেলিয়ার প্রথম নারী বৈমানিক নন। ১৯২৭ সালে দেশটিতে নারীরা বিমান চালানোর বৈধতা পাওয়ার পর লাইসেন্স গ্রহণ করা নারীদের তালিকায় ন্যান্সি সপ্তম। তবে তাঁদের মধ্যে বৈমানিক পেশাকে প্রথম গ্রহণ করেন তিনি। তাই অস্ট্রেলিয়ায় নারী বৈমানিকের অগ্রদূত হিসেবে ন্যান্সি-বার্ডকেই প্রথম নারী বৈমানিক সম্বোধন করা হয়।

ইসরাইলের মদদে বিপজ্জনক হামলার পরিকল্পনা : পাকিস্তানের হুঁশিয়ারিতে পিছু হটে ভারত

গত সপ্তাহে পাকিস্তানের সাথে উত্তেজনার পারদ যখন তুঙ্গে তখন ইসরাইলের সমর্থন নিয়ে পাকিস্তানে এক বিপজ্জনক হামলা চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল ভারত। রাজস্থানের বিমানঘাঁটি থেকে এই হামলা চালানোর পরিকল্পনা হয়েছিল। তবে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঠিক সময় এই পরিকল্পনার ব্যাপারে অবগত হওয়ার পর ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে যথাযথ জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে বার্তা পাঠায়। ফলে বিপজ্জনক পথে পা বাড়ানো থেকে ভারত বিরত থাকে।
পাকিস্তান সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। ভারতকে সময়মতো গোয়েন্দারা ও অন্যরা ম্যাসেজ দিয়ে পরিষ্কার করে যে, যদি পরিকল্পনা মতো হামলা করা হয় তাহলে তার উপযুক্ত জবাব আসবে। আর এমন হলে দেশ দু’টির সামনে পেছনে ফেরার কোনো পথ থাকবে না।

ভারতের রাজস্থানের বিমানঘাঁটি থেকে পাকিস্তানের ভেতরে অন্তত ছয় থেকে সাতটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরিকল্পনা করেছিল নয়াদিল্লি। তবে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পাকিস্তান সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ায় ভারতের এই পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়েছে।



পাকিস্তানের সরকারি সূত্র বলছে, পাকিস্তান এই পরিকল্পনার ব্যাপারে ঠিক সময়েই জানতে পারে এবং দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে সতর্ক করে দেয় যে, এ ধরনের যেকোনো হামলার যথাযথ প্রতিশোধ নেয়ার জন্য পাকিস্তান প্রস্তুত। পাকিস্তানি গোয়েন্দারা সেই সময় ভারতকে জানায়, ভারত যে হামলা চালাবে তার তিনগুণ বেশি হামলা চালাবে পাকিস্তান।

পাকিস্তানি সরকারি ওই কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘পাকিস্তানের বড় বড় শহর বিশেষ করে করাচি এবং বাহাওয়ালপুরে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করেছিল ভারত। ভারতের সম্ভাব্য এই হামলার ব্যাপারে পাওয়া তথ্য বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সাথে শেয়ার করা হয়েছে। সময়োচিত গোয়েন্দা তথ্য ও গোপনীয় বার্তার ফলে ভারতের কাছে এটা পরিষ্কার করা হয়েছিল যে, যদি পাকিস্তানে হামলার পরিকল্পনা করা হয়, তাহলে এর যথাযথ জবাব দেয়া হবে। ফলে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে যাবে, যেখান থেকে আর পিছু ফেরার কোনো সম্ভাবনা থাকবে না।’

আটক ভারতীয় পাইলটকে মুক্তির মাধ্যমে ভারতের সাথে ইসলামাবাদ শান্তি চায় বলে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোকে জানায় পাকিস্তান। শান্তি স্থাপনে পাকিস্তানের ইচ্ছা আছে বলেও জানানো হয়। গত সপ্তাহে পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশী এ দুই দেশের মধ্যে যখন উত্তেজনা চরমে পৌঁছায় তখন বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা পাকিস্তান ও ভারতের সাথে যোগাযোগ করেন। এই উত্তেজনার সময় প্রতিবেশী এ দুই দেশের মধ্যে সরাসরি কোনো যোগাযোগ হয়নি। তবে দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে যোগাযোগ ছিল।



পাকিস্তানের ওই সূত্র বলছে, গত কয়েকদিন আগে পাক-ভারত উত্তেজনা যেরকম ছিল এখন সেরকম নেই। তবে দেশটির সরকার, সশস্ত্র বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এখনো সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। আটক ভারতীয় পাইলটের মুক্তির পর পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। পাক-ভারত উত্তেজনা প্রশমনে যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক ও সৌদি আরব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গত কয়েকদিনে প্রতিদ্বন্দ্বী এ দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমিয়ে আনতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে চেষ্টা করেছেন।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের পুলওয়ামায় দেশটির কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর (সিআরপিএফ) গাড়ি বহরে হামলায় ৪০ জনের বেশি জওয়ানের প্রাণহানি ঘটে। পরে আজাদ কাশ্মিরে যুদ্ধবিমান থেকে অভিযান চালায় ভারতীয় বিমানবাহিনী। এই অভিযানের একদিন পর ২৭ ফেব্রুয়ারি দুই দেশের আকাশসীমায় পাল্টাপাল্টি যুদ্ধবিমানের অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে। পাকিস্তান ভারতীয় বিমানবাহিনীর দু’টি বিমান ভূপাতিত এবং একজন পাইলটকে আটকের দাবি জানায়। অন্য দিকে, ভারতও পাকিস্তানের একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি তোলে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে জানায়, পাকিস্তানি অনুপ্রবেশ ঠেকানোর সময় ভারতীয় একটি মিগ-২১ যুদ্ধবিমান ও অভিনন্দন বর্তমান নামে একজন পাইলট নিখোঁজ রয়েছেন।

অভিনন্দনকে আটকের খবর প্রকাশের পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারতকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান। পরে দেশটির পার্লামেন্টে যৌথ এক অধিবেশনে শান্তিপূর্ণ আবহ তৈরির লক্ষ্যে আটক পাইলটকে ভারতে ফেরত পাঠানোর ঘোষণা দেন ইমরান। এমন এক অবস্থায় উত্তুঙ্গ সময় পার করেছে পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী দু’টি দেশ। কয়েক দশকে তাদের মধ্যে এত বেশি যুদ্ধের কাছাকাছি চলে যাওয়ার মতো অবস্থা সম্ভবত সৃষ্টি হয়নি। আর এ যুদ্ধ লেগে গেলে কী হতো পরবর্তীতে তা নিশ্চিত করে কেউ জানেন না।

সূত্র : ডন ও এক্সপ্রেস ট্রিবিউন

মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে খেলুক, বার্সা চাইছে না?

রাশিয়া বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে ফ্রান্সের বিপক্ষে ম্যাচটিতে সর্বশেষ জাতীয় দলের জার্সিতে খেলেছিলেন লিওনেল মেসি। এরপর আর্জেন্টিনার আকাশি-সাদা জার্সিতে আর দেখা যায়নি তাঁকে। জাতীয় দল থেকে আপাতত স্বেচ্ছা-অবসরে আছেন তিনি। কিছুদিন আগে সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনার জার্সিতে ফিরবেন তিনি। এর আগে মাঠে নামবেন দুটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে। তবে এখন শোনা যাচ্ছে অন্য খবর, বার্সেলোনা নাকি চায় না সদ্য চোট থেকে ফেরা মেসি দেশের হয়ে খেলতে নামুন।
সদ্য চোট থেকে ফিরেছেন মেসি, এখনো শতভাগ ফিট নন। ফিটনেসের অজুহাত দিয়ে মেসিকে আর্জেন্টিনার হয়ে এখনই খেলতে দিতে চাচ্ছে না বার্সেলোনা। বেশ কয়েক ম্যাচ ধরেই মেসি ঠিক তাঁর মতো করে খেলতে পারছেন না। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে গত সপ্তাহে টানা দুটি এল ক্লাসিকো জিতলেও এই দুই জয়ে মেসির তেমন কোনো ভূমিকা ছিল না। প্রথম ক্লাসিকোতে তারা জিতেছে লুইস সুয়ারেজের কৃতিত্বে, পরের ক্লাসিকোর নায়ক ছিলেন ইভান রাকিতিচ। কয়েক সপ্তাহ আগে ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে এক লিগ ম্যাচে ভ্যালেন্সিয়ার স্প্যানিশ লেফটব্যাক টনি লাতোর সঙ্গে বল দখলের লড়াই করতে গিয়ে ঊরুতে চোট পান মেসি। সেই ব্যথা এখনো থেকে থেকে যন্ত্রণা দিচ্ছে তাকে। মাঠে নামলেও নিজের পুরোটা দিতে পারছেন না। খেলায় দেখা যাচ্ছে না সেই পুরোনো ঝলক। তাই বার্সা চাচ্ছে না এই অবস্থায় আর্জেন্টিনার হয়ে গুরুত্বহীন ম্যাচ খেলে চোটের ঝুঁকি বেড়ে যাক মেসির। আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে চায় না বার্সেলোনা।
ভেনেজুয়েলা ও মরক্কোর বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে আর্জেন্টিনা। প্রথমটা খেলবে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের মাঠ ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটানোতে, আরেকটা খেলবে মরক্কোতে গিয়ে। আর্জেন্টিনার কোচ হিসেবে এ দুই ম্যাচ দিয়ে আনুষ্ঠানিক অভিষেক ঘটবে লিওনেল স্কালোনির। কোপা আমেরিকার প্রস্তুতি হিসেবে এ ম্যাচ দুটি খেলবে আর্জেন্টিনা। ১৪ জুন ব্রাজিলে শুরু হবে কোপা আমেরিকার ৪৬তম আসর।

রিয়াল মাদ্রিদের আর কিছুই রইল না!

কোপা দেল রে, এরপর লা লিগা। বার্নাব্যুতে দুই এল ক্লাসিকো হেরে টালমাটাল রিয়াল মাদ্রিদের কবর রচনা করল আয়াক্স। নিজেদের দুর্গে পুঁচকে আয়াক্সের বিপক্ষে ৪-১ গোলে হেরেছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। দুই লেগ মিলে ৫-৩ গোলের অগ্রগামিতায় চ্যাম্পিয়নস লিগের রেলগাড়ির শিকলটা এখানেই টানতে হচ্ছে স্প্যানিশ জায়ান্টদের।

কোপা দেল রের যাত্রা শেষ। লা লিগা? সে তো দূরের বাতিঘর। শক্তি আর পরিসংখ্যানের বিচারে আয়াক্সকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে টিকে থাকতে পারত রিয়াল। খেলাটা বার্নাব্যুতে বলেই সে আশার পারদ ছিল তুঙ্গে। রিয়ালের সমর্থকেরা আশায় বুক বেঁধে বসে ছিলেন বার্নাব্যুতেই নিজেদের চেনা ঘাসের কোলজুড়ে—আবারও স্বপ্ন বুনবে রিয়াল, ঘুরে দাঁড়াবে বেনজেমা-ভিনিসিয়ুয়েসরা। কিন্তু কিসের কী...এই মৌসুমে রিয়ালের কপালে যে আর কিছুই রইল না। শেষ পর্যন্ত বাদ পড়তে হলো চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকেও! ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমের পর এবারই কোনো ক্লাব নিজেদের মাঠে প্রথম লেগ হেরেও চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে রিয়াল মাদ্রিদকে বিদায় করল।
অথচ এই রিয়াল মাদ্রিদই শেষ পাঁচ চ্যাম্পিয়নস লিগের চারটির শিরোপা ঘরে তুলেছে। আর আয়াক্স প্রতিযোগিতায় ২২ বছর আগে (১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে) শেষ নকআউট পর্বে উঠেছে। সেবার অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে হারিয়ে সেমিতেও উঠেছিল ডাচ্‌ ক্লাবটি। সেমিতে জুভেন্টাসের কাছে শেষ পর্যন্ত হোঁচট খায় আয়াক্স। মজার বিষয় হচ্ছে ইউরোপে আয়াক্সের বিপক্ষেই সবচেয়ে ভালো খেলার রেকর্ড রিয়ালের। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে আয়াক্সের বিপক্ষে শেষ সাত ম্যাচেই জিতেছেন সোলারির শিষ্যরা। রিয়ালের বিপক্ষে আয়াক্স জয় পেয়েছিল ১৯৯৫ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে।
আয়াক্সের উল্লাসেও কোনো খামতি ছিল না। ছবি: এএফপি
আয়াক্সের উল্লাসেও কোনো খামতি ছিল না। ছবি: এএফপি
মঙ্গলবার রাতের খেলায় যেন বিস্ময়ের শেষ ছিল না। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে এবারই প্রথম বার্নাব্যুতে প্রথমার্ধের ১৮ মিনিটের মধ্যে ২ গোল হজম করেছে স্বাগতিকরা। মাঝেমধ্যে পরিসংখ্যানও যে ফলে যায়, তা প্রমাণ করল আয়াক্স—চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ৪৭ ম্যাচের যে কটাতে আয়াক্স শুরুতে গোল করেছে, তার প্রতিটিতেই জয় পেয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

ম্যাচের শুরুতে অবশ্য ভালো খেলার ইঙ্গিতই দিচ্ছিল বেনজেমা-ভিনিসিয়ুসেরা। ষষ্ঠ মিনিটে ভাসকেজের ক্রসে ঠিকঠাক মাথা ছোঁয়াতে পারলেই গোল পেতেন ভারানে। পাল্টা আক্রমণে উঠে ক্রুসের ভুলে গোল পেয়ে যায় অতিথিরা। ক্রুসের ব্যাকপাস থেকে বল পেয়ে যান ডুসান টাড়িচ। টাড়িচের বাড়ানো বল জালে জড়াতে ভুল করেননি জিয়েখ। মরোক্কোর এই খেলোয়াড়ের গোলে এগিয়ে আক্রমণের ধার বাড়ায় আয়াক্স। তাতে কাজও হয়। ১৮তম মিনিটেই দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় অতিথিরা। এবারও টাড়িচের বাড়ানো বল থেকে গোল পায় আয়াক্স। তবে এবার অতিথিদের হয়ে বল জালে জড়ান ডেভিড নারেস। চ্যাম্পিয়নস লিগের এই মৌসুমে এর আগ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি গোলে (৫ গোল, ৩ অ্যাসিস্ট) সরাসরি অবদান রাখা এই ডুসান টাড়িচ নিজে গোল পান ৬২তম মিনিটে। এক মৌসুমে আয়াক্সের হয়ে ছয় গোল করা দ্বিতীয় খেলোয়াড় টাড়িচ। ২৪তম মিনিটে ভিনিসিয়ুসের শট আটকে দেন আয়াক্স গোলরক্ষক। এর মিনিট দুয়েক আগে অবশ্য আয়াক্সও গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেছিল।
ডুসান টাড়িচ, আয়াক্সের এই সার্বিয়ান ছিলেন দুর্দান্ত। ছবি: এএফপি
ডুসান টাড়িচ, আয়াক্সের এই সার্বিয়ান ছিলেন দুর্দান্ত। ছবি: এএফপি
এই রাতে ভাগ্যদেবী রিয়ালের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে হয়তো। তা না হলে প্রথমার্ধেই এক এক করে লুকাস ভাসকেজ ও ভিনিসিয়ুস জুনিয়র কেন চোট পেয়ে মাঠ ছাড়বেন! ২৯তম মিনিটে ভাসকেজের বদলি হিসেবে নামেন বেল আর ভিনিসিয়ুসের বদলি হিসেবে নামেন অ্যাসেনসিও। প্রথমার্ধে বেল কিংবা অ্যাসেনসিওর কেউই গোল পরিশোধ করতে পারেননি। ৪৩তম মিনিটে বেলের শট অবশ্য পোস্টে লেগে ফিরে আসে।

রিয়াল মাদ্রিদ দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু করে আরও শঙ্কা নিয়ে। কারণ, চ্যাম্পিয়নস লিগের এই মৌসুমে আয়াক্সের ১২টি গোলের ১১টিই হয়েছে দ্বিতীয়ার্ধে। আর এই ম্যাচে তো প্রথমার্ধেই ২ গোল হজম করে বসে আছে রিয়াল। ৪৯তম মিনিটে অ্যাসেনসিও শট পোস্টের পাশ দিয়ে গেলে অল্পের জন্য রক্ষা পায় অতিথিরা। এরপর বেনজেমার বাঁ পায়ের শটও বারের ওপর দিয়ে চলে যায়। ৫২তম মিনিটে টেড়িচের দুর্দান্ত শট আটকে রিয়ালকে আরও গোল হজমের হাত থেকে রক্ষা করেন কোর্তোয়া। মিনিট দশেক পর অবশ্য সেটা পারেননি। ৬২তম মিনিটে টেড়িচের গোলে ৩-০–তে পিছিয়ে পড়া রিয়াল তখন রীতিমতো কাঁপছে। ৭০তম মিনিটে গ্যালারি ঠাসা দর্শকদের উৎসবের রঙে রাঙানোর উপলক্ষ এনে দেন অ্যাসেনসিও। অ্যাসেনসিওর গোলে ব্যবধান কমলেও শেষ রক্ষা হয়নি রিয়ালের। দুই মিনিট পরই লাসসি স্কোনি রিয়ালের বুকে শেষ কোপটা মারেন। শেষ ১০ মিনিটে গোলের সুযোগ পান রিয়ালের বেল, তবে সেটা কাজে লাগাতে পারেননি ওয়েলস ফরোয়ার্ড। তাঁর পথ ধরেই হাঁটেন আয়াক্সের টাড়িচ।

যোগ হওয়া সময়ে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে নাচোর মাঠ ছেড়ে যাওয়ার দৃশ্য, আর ১০ জনের দলে পরিণত হওয়া রিয়াল খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষায় তখন সব হারিয়ে দিশেহারা ক্লান্ত পথিকের প্রতিচ্ছবিই ফুটে উঠেছিল!